" আজকে এই ছবিটা একেছি বাবা, কেমন হয়েছে বলো তো?" ছবি আনাড়ি হাতের আঁকা হলেও বাচ্চা দুটি ছেলেমেয়ের অবয়ব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তারা হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, মাথার উপর কয়েকটা বেলুন উড়ছে। " খুব সুন্দর হয়েছে মা। কারা এরা?" " এইটা আমি" একটা ছবিতে ছোট্ট গোল আংগুল রেখে বলল জ্যোতি...
আরো পড়ুন
" আজকে এই ছবিটা একেছি বাবা, কেমন হয়েছে বলো তো?" ছবি আনাড়ি হাতের আঁকা হলেও বাচ্চা দুটি ছেলেমেয়ের অবয়ব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তারা হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, মাথার উপর কয়েকটা বেলুন উড়ছে। " খুব সুন্দর হয়েছে মা। কারা এরা?" " এইটা আমি" একটা ছবিতে ছোট্ট গোল আংগুল রেখে বলল জ্যোতি " আর এইটা রুবেল। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড"। রজনের বুকের মধ্যে একটা দমকা বাতাস বইতে থাকে, একটা খালি জায়গা এখনও রয়ে গেছে সেখানে। মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে সে নিজের ঘরে ঢুকল। ব্যালকনিতে দাড়িয়ে একটা সিগারেট ধরাতেই নেলী পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, বলল, " খাওয়া দাওয়া করে সিগারেট ধরালে হতনা?" রজন হাসল " যাও আসছি" এই মূহুর্তে কোন কারণ ছাড়াই তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু পয়ত্রিশ বছরের একজন পুরুষ মানুষ বারান্দায় দাঁড়িয়ে অকারণে কাঁদতে পারেনা, তাই নিজেকে সামলে রাখল। নেলী অনবরত ডেকে যাচ্ছে, তার হঠাৎই মনে হল, পাশে রাখা ফুলের টপটা তুলে আছড়ে ভেঙে ফেলে। তবে সে খুবই ভদ্র একজন মানুষ, তার মত মানুষদেরকে ইংরেজিতে ফ্যামিলি ম্যান বলে, তাই সেটাও আর করা হয়ে উঠেনা।তারপর আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খাবার টেবিলে চলে গেল। আসলেই ক্ষুধা পেয়েছে। রজন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। তার সব আছে বলেই কি জীবনটা এত পানশে লাগে মাঝে মাঝে? হয়ত যদি মাথার উপর নিজের ছাদ না থাকত, চাকরি খুজতে খুজতে জুতোর তলা খয়ে যেত অথবা এক বেলা খেলে অন্য বেলায় খাবার অনিশ্চয়তা থাকত, কিংবা কর্কশ স্বরে রাতদিন বউ শ্বাশুড়ির ঝগড়া থাকত তাহলে হয়ত এত নিস্তরংগ লাগতনা সব। আরেকটা বাচ্চা হলে সত্যিই মেয়েটার জন্যে ভাল হবে, কিন্তু রজন বোধহয় আষ্ঠেপৃষ্ঠে আটকে যাবে আরও। তার ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে সব ফেলে ঘুরতে যেতে, সারারাত তারার নিচে বসে ধুমপান করতে, অকারণে হাসতে। এমন না যে তার বন্ধুর সংখ্যা কম কিংবা নেলীও এমন নয় যে মাসে দুই একদিন বাইরে কাটালে খুব রাগ করবে। কিন্তু রজন নিজেই পারেনা। তার ইচ্ছে করে কাউকে বলতে, বাসের টিকেট করে দে, রিক্সা ঠিক করে দে, আমার ব্যাগটা ঘাড়ে নে, খাইয়ে দে, জুতার ফিতা বেঁধে দে, আমি চিন্তাশুন্য হয়ে বসে থাকি, তুই জেগে পাহাড়া দে, আমি ঘুমাই…” মাত্র দুইটি চরিত্র নিয়ে এই গল্প দ্বৈরথ, দুইজন পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের গল্প। এদের পরিচয় শৈশবে, তারপর একই সাথে তাদের বেড়ে ওঠা যৌবন পর্যন্ত। সম্পর্কটা যখন তীব্র বন্ধুত্ব আর নির্ভরতার, ঠিক তখন তাদের একজন বাধ্য হয় পুরোনো সব পিছুটান ছিড়ে ফেলে দূরে চলে যেতে, কিন্তু ছোটবেলার সেই বন্ধুটির কথা কখনই ভুলতে পারেনা, তার জীবন কাটে একাকীত্বে। গল্পের আরেকটি চরিত্র, আপাতদৃষ্টিতে তার জীবন সব দিক দিয়ে পরিপূর্ণ মনে হলেও কি যেন একটা অতৃপ্তি তাকেও তাড়িয়ে বেড়ায়, বস্তুত, সবার মাঝখানে থেকেও তাকে অদ্ভুত এক একাকীত্বের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হয়।
কম দেখান